আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম

পিচ ছিল ব্যাটিং সহায়ক। লক্ষ্যটাও ছিল নাগালের মধ্যে। অধিকন্তু চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটসম্যানরা করলেন দারুণ ব্যাটিং। তাতে সহজে জয় তুলে নিল তারা। ঢাকা প্লাটুনকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে উঠল বন্দরনগরীর দলটি। সেই সঙ্গে লিগ থেকে বিদায় ঘটল রাজধানীর দলটির।

১৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও জিয়াউর রহমান। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৪২ রান তোলেন তারা। কার্যত সেখানেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় দলটি। মেহেদী হাসানের শিকার হয়ে ১২ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ব্যক্তিগত ২৫ রান জিয়াউর ফিরলেও থেকে যান গেইল।

পরে ইনফর্ম ইমরুল কায়েসকে নিয়ে হাল ধরেন তিনি। যথার্থ সমর্থনও পান। একসময় দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। দুজনই চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। এতে হু হু করে বাড়ে চট্টগ্রামের রানের চাকা। জয়ের পথেও এগিয়ে যায় তারা। তবে আচমকা থেমে যান ইমরুল। শাদাব খানের বলে সাজঘরে ফেরত আসেন তিনি। ফেরার আগে ২২ বলে ৩ ছক্কার বিপরীতে ১ চারে ৩২ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।

সহযোদ্ধা হারিয়ে ক্রিজে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি গেইল। একই বোলারের বলে বিদায় নেন তিনি। ফেরার আগে ৪৯ বলে ২ ছক্কার বিপরীতে ১ চারে স্বভাববিরুদ্ধ ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। তবে জয় তখন চট্টলার হাতছোঁয়া দূরত্বে। পরে চ্যাডউইক ওয়ালটনকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করেন তারা।

জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভীষণ চড়া ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাত্র ১৪ বলে ৩৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। এ পথে ছিল তার ৪টি ছয়ের মার। তবে কোনো চার ছিল না। অপর প্রান্তে ১২ রানে আনবিটেন থাকেন ওয়ালটন। দুজনই বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।

সোমবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে ঢাকার মুখোমুখি হয় চট্টগ্রাম। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান চট্টগ্রাম অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।হাতে ১৪টি সেলাই নিয়ে টস করতে নামেন ঢাকা কাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে তাদের ব্যাটিংয়ে সেই অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুরুতেই ক্রিজ ছেড়ে তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে রুবেল হোসেনের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল।

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে নাসুম আহমেদের শিকার হয়ে দ্রুত ফেরেন আনামুল হক। পরক্ষণেই মাহমুদউল্লাহর বলির পাঁঠা হন লুইস রিসে। দলীয় ২৮ রানে টপঅর্ডারের ৩ ব্যাটসম্যান হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে ঢাকা। সেখানে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মিডলঅর্ডাররা। নিয়মিত বিরতিতে যাওয়া-আসা করেন তারা। তাদের বিষাক্ত ছোবল মারেন রায়াদ এমরিত। একে একে মেহেদী হাসান, জাকের আলি ও মুমিনুল হককে ফিরিয়ে দেন তিনি। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন এ ক্যারিবিয়ান। যদিও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

ঢাকার প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মুমিনুল। সমান ৩১ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। খানিক দম নিয়ে নাসুমের কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আসিফ আলি। এতে মাত্র ৬০ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ঢাকা। এ অবস্থায় থিসারা পেরেরাকে নিয়ে খেলা ধরার চেষ্টা করেন শাদাব খান। ধীরে ধীরে এগিয়ে যান তারা। একপর্যায়ে জমে ওঠে তাদের জুটি। ক্রিজে সেট হয়ে যান শাদাব-পেরেরা। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে শুরু করেন দুজনই।

তাতে সম্মানজনক স্কোরের পথে হাঁটে দলটি। কিন্তু হঠাৎ রুবেলের বলে পথচ্যুত হন পেরেরা। ১৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৫ রানের ঝড়ো ক্যামিও খেলে ফেরত আসেন তিনি। তবে একপ্রান্ত আগলে থেকে যান শাদাব। ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের ব্যাটিং কারিশমা দেখান তিনি।শেষদিকে চট্টগ্রাম বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালান এ স্পিন অলরাউন্ডার। রান না পেলেও উইকেট সামলে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মাশরাফি। তাতে মাঝারি সংগ্রহ পায় ঢাকা।

পথিমধ্যে ফিফটি তুলে নেন শাদাব। ৪১ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৪ রানের হার না মানা ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। মূলত তার ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৪ রানের পুঁজি পায় তারা। চট্টগ্রামের হয়ে এমরিত নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন রুবেল ও নাসুম।